মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, তুমি ফিরে এসো!

বিদায়ের বাঁধনছেঁড়া কষ্ট: মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, তুমি ফিরে এসো!

যেন সব মিশে গেছে বয়সের কবরে
প্রিয় প্রেমের মৃত্যু মরুর বালুচরে
মুখ ফিরিয়ে নেয়ে আমার সময়।

আমি স্তব্ধ তোমার জমাট অভিমানে
বিষাদ ছুঁয়ে যায় ভুল সে কূজনে
আকাশের মেঘ ভীষণ ধূসর।

সেই ২০০৭ সালের এক উজ্জ্বল সকালে, যখন এক তরুণ ক্রিকেটার বাংলাদেশের জার্সি গায়ে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পা রাখলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, তখন কেউ কি ভেবেছিল, একদিন তিনি হয়ে উঠবেন নির্ভরতার আরেক নাম? মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, যার ব্যাট কথা বলেছে তখনই, যখন বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি চেয়েছে। যার নীরব লড়াই, দৃঢ়সংকল্প, এবং শুদ্ধ ভালোবাসা ছিল শুধুই দেশের জন্য। আজ, যখন তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদায় নিলেন, তখন পুরো বাংলাদেশ কেঁদে উঠেছে—এক অসীম শূন্যতার অনুভূতিতে।

যোদ্ধার বিদায়—যেটা আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটায়!

একজন ক্রিকেটারের বিদায় হয়ত সময়ের নিয়ম, কিন্তু কিছু কিছু বিদায় কেবল একজন ব্যক্তির নয়, সেটা পুরো জাতির এক অশ্রুভেজা অধ্যায়। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এর অবসর ঘোষণার সেই লাইনগুলো যখন পড়ছিলাম, তখন মনে হচ্ছিল—তিনি কি নিজেও জানেন, কত হাজারো হৃদয়ে আজ তোলপাড় চলছে? তিনি কি জানেন, তার নিঃশব্দ যাত্রার আড়ালে কত ক্রিকেটপ্রেমী এক টুকরো স্বপ্ন ভেঙে গেছে?

“আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিচ্ছি…”—কেবল একটি বাক্য, অথচ এর ওজন কতটা, তা কি কেউ অনুভব করতে পারছে? সেই যে ২০১৫ বিশ্বকাপে পরপর দুই সেঞ্চুরি করে গোটা ক্রিকেটবিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন, সেই মুহূর্তগুলো কি আজও আপনার মনে পড়ে, রিয়াদ? কীভাবে আপনি আমাদের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, কীভাবে আপনি পরিণত হয়েছিলেন আমাদের নির্ভরতার প্রতীক?

সেই ২০১৬, সেই ২০১৭, সেই সব কান্না—আপনি কি ভুলে গেছেন?

ক্রিকেট শুধু একটি খেলা নয়, এটি আমাদের আবেগের আরেক নাম, আমাদের হৃদয়ের স্পন্দন। আর সেই আবেগের সবচেয়ে নিঃশব্দ অথচ সবচেয়ে উচ্চকণ্ঠ যোদ্ধার নাম—মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।

২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, ভারতের বিরুদ্ধে সেই দুঃস্বপ্নের ম্যাচ। শেষ দুই বলে দুই রান দরকার ছিল, কিন্তু আপনি পারলেন না! সেদিনের পর আপনি আর কত রাত ঘুমাতে পারেননি, জানি না। কিন্তু আমরা জানি, আপনার চোখের পানি আমাদের চোখের পানির চেয়ে কম ছিল না।

তারপর এলো ২০১৭, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ঐতিহাসিক শততম টেস্ট। তখন কি কেউ ভেবেছিল, সেই ম্যাচের হিরো হবেন আপনি? কিন্তু আপনি ফিরলেন বীরের মতো, হাত উঁচিয়ে উল্লাস করলেন, এবং আমরা বিশ্বাস করলাম—বাংলাদেশের ক্রিকেটের আসল যোদ্ধারা ব্যর্থ হয় না।

আরো পড়ুন : নেইমারের বার্সায় ফেরা হবে?

আজ যখন আপনি চলে যাচ্ছেন…

আজ যখন আপনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিচ্ছেন, তখন আমাদের প্রশ্ন—এভাবে কেন? কোনো বিদায়ী ম্যাচ নেই? কেন কোনো গার্ড অব অনার নেই? কেন পুরো স্টেডিয়াম ভরে মানুষ আপনাকে সম্মান জানানোর সুযোগ পেল না? আমরা কি ভুলে গেছি, আপনি সেই মানুষ, যিনি কখনো নিজের জন্য কিছু চাননি, বরং দেশের জন্য নিজের সবটুকু উজাড় করে দিয়েছেন?

হয়তো সময় একদিন আপনাকে ভুলে যাবে, পরের প্রজন্ম অন্য কাউকে নতুন নায়ক বানাবে, কিন্তু বিশ্বাস করুন, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ নামটি হারিয়ে যাবে না। যখনই কোনো ব্যাটসম্যান ক্রিজে গিয়ে দলের জন্য ধৈর্য ধরবে, যখনই কেউ বুক চিতিয়ে প্রতিপক্ষের সামনে দাঁড়াবে, তখনই আপনার সেই অদম্য লড়াই আমাদের চোখের সামনে ভেসে উঠবে।

শেষ কথায়…

মাহমুদউল্লাহ, আপনি আমাদের হৃদয়ে আছেন, থাকবেন।আমরা জানি, আপনি কখনো আবেগ প্রকাশ করেন না, তবে আজ, একবার শুধু বলুন — বাংলাদেশের ক্রিকেটকে কি আপনি এখনও ভালোবাসেন?

কারণ, আমরা আপনাকে ভালোবাসি। এবং চিরকাল ভালোবাসব!

মো. ইশতিয়াক হোসেন রাতুল, শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *