অজান্তেই গাজার হত্যাকাণ্ডের সাথে যুক্ত
কানাডা প্রবাসী মরক্কান বংশোদ্ভূত সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার ইবতিহাল আবুসআদ ২০২৫ সালের শুরুর দিকে হঠাৎ এমন এক খবর জানতে পারেন, যা তাকে স্তব্ধ করে দেয়। তিনি কাজ করতেন Microsoft-এর Artificial Intelligence Division-এ। হঠাৎ একদিন তিনি জানতে পারেন, তার বিভাগ থেকে যে AI প্রযুক্তি তৈরি হচ্ছে, তা Gaza Strip-এ অভিযানে ব্যবহার করছে Israeli Military।
Project Azure : এআই প্রযুক্তির নামে রক্তপাতের যন্ত্র
Microsoft তাদের গোপন এক প্রজেক্ট — Microsoft Project Azure-এর মাধ্যমে ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর কাছে দীর্ঘদিন ধরে Cloud Computing, AI Tools, Facial Recognition System এবং Machine Learning Algorithm সরবরাহ করে আসছে। ইবতিহাল জানতেনই না যে তার তৈরি করা Speech-To-Text AI Code এভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। এই কোডে তার কাজ ছিল মূলত নির্দিষ্ট কিছু অংশে ভাষার রূপান্তর।
সত্য জানার পর প্রতিবাদের সিদ্ধান্ত
এই ঘটনা জানার পরপরই তিনি যুক্ত হন “No Azure for Apartheid” নামক একটি Employee-Led Movement-এ। তিনি এই বিষয়ে তার আরও কয়েকজন সহকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে Microsoft-এর CEO Satya Nadella, AI Division-এর প্রধান Mustafa Suleyman এবং অন্যান্য সিদ্ধান্তগ্রহণকারীদের কাছে অভিযোগ জানান। তারা লিখিতভাবে এই প্রজেক্ট নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, কিন্তু কোনো উত্তর না দিয়ে বরং Microsoft এই বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা শুরু করে।
প্রতিবাদে মুখর দুই সাহসী নারীর কণ্ঠরোধ
২০২৫ সালের ৪ঠা এপ্রিল, Microsoft-এর ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানের দিন সরাসরি মঞ্চের সামনে প্রতিবাদ করেন ইবতিহাল আবুসআদ ও তার সহকর্মী বানিয়া আগারওয়াল। ইবতিহাল Microsoft-এর AI প্রধান মুস্তাফা সুলেইমানের মুখোমুখি হয়ে চিৎকার করে বলেন:
“Mustafa, Shame on you! আপনি বলছেন আপনি এআইকে ভালো কাজে ব্যবহার করতে চান, অথচ এই এআই দিয়েই গাজাতে ৫০ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে!”
অন্যদিকে বানিয়া মঞ্চে গিয়ে Bill Gates, Steve Ballmer ও Satya Nadella-কে উদ্দেশ্য করে বলেন:
“আপনারা উৎসব করছেন, অথচ Microsoft-এর AI & Cloud প্রযুক্তি দিয়ে Gaza-র ৫০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে!”
চাকরিচ্যুত করার পরও প্রতিবাদ অব্যাহত
এই ঘটনার পরপরই Microsoft তাদের দুজনকেই চাকরি থেকে বরখাস্ত করে। এমনকি তাদের Employee Email Access এবং Internal Tools ব্লক করে দেওয়া হয়। বহিষ্কারের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয় — “Willful disobedience and misconduct”।
ইবতিহাল এই ঘটনার প্রতিবাদে বলেন, “ঘটনার দিন সেখানে ‘Speak Your Mind at Microsoft’ লেখা মগ বিতরণ হচ্ছিল। আমরা আমাদের কথা বলতেই তো চাকরি হারালাম।”
তিনি আরও বলেন, “আমার কোড দিয়ে যদি বাচ্চা মারা যায়, আমি নীরব থাকতে পারি না।”

ইবতিহালের মতে, একজন কোডারের কাজ শুধু কোড লেখা নয়, বরং তার লেখা কোড কোথায় এবং কিভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে, সেটাও জানা ও ভাবা একজন কোডারের নৈতিক দায়িত্ব। তিনি বলেন, “আমি জানতাম এই প্রতিবাদের কারণে আমি চাকরি হারাতে পারি, কিন্তু আমার এই প্রতিবাদের কারণে যদি মাত্র ১০ জন মানুষও জানতে পারে Microsoft-এর যুদ্ধের সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি, তাহলেই আমি সফল।”
বড় কোম্পানিগুলোর মুখোশ খুলছে কর্মীরাই
শুধু Microsoft-ই নয়, গুঞ্জন আছে Google এবং Amazon-ও জড়িত রয়েছে Project Nimbus-এ। যেখানে ইসরায়েলের সঙ্গে ১.২ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির মাধ্যমে AI ও Surveillance প্রযুক্তি দিয়ে Palestinian Territories-এ নজরদারি চালানো হচ্ছে। এদিকে BDS Movement ইতোমধ্যেই Microsoft-এর Xbox, Minecraft, Call of Duty এবং Candy Crush গেমগুলোকে Boycott List-এ রেখেছে।
কর্পোরেট মুখোশের আড়ালের বাস্তবতা
এই ঘটনা এখন পানির মতোই স্বচ্ছ যে, Big Tech Corporation গুলোর ঝলমলে ইমেজের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক ভয়ংকর বাস্তবতা। ইবতিহাল ও বানিয়ার মতো সাহসী কর্মীদের কণ্ঠরোধ করে হয়তো Microsoft কিছু সময়ের জন্য সত্যকে চাপা দেওয়ার চেষ্টা করতে পারে, কিন্তু AI Ethics এবং Human Rights Violation-এর প্রশ্নে সত্য কখনোই চুপ থাকে না। একদিন না একদিন মানুষ সত্যটা জানবেই।
Read More : ডোনাল্ড ট্রাম্প এর বিরুদ্ধে মুসলিম অধিকার সংস্থার মামলা