স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশে পড়াশোনা এবং উচ্চশিক্ষা গ্রহণের স্বপ্ন অনেকেরই থাকে, তবে আর্থিক সীমাবদ্ধতা প্রায়ই এই স্বপ্নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। স্কলারশিপ বা শিক্ষাবৃত্তি এই বাধা দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা শিক্ষার্থীদের স্বল্প খরচে বা বিনা খরচেই বিদেশে পড়াশোনার সুযোগ করে দেয়। কিভাবে বিদেশে উচ্চশিক্ষার ও স্কলারশিপ এর জন্য প্রস্তুতি নিবেন এবং আবেদন করবেন, এটি নিয়েই আজকের বিস্তারিত লেখা।
স্কলারশিপ প্রধানত দুই ধরনের হতে পারে:
1. সরকারি স্কলারশিপ
বিভিন্ন দেশের সরকার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য স্কলারশিপ প্রদান করে থাকে। উদাহরণস্বরূপ:
- ফুলব্রাইট স্কলারশিপ (যুক্তরাষ্ট্র): এই স্কলারশিপের জন্য বাংলাদেশের যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকে প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হতে হবে, কমপক্ষে দুই বছরের কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে, এবং আইইএলটিএসে ন্যূনতম স্কোর ৭ বা টোফেলে ৮০ থাকতে হবে।
- ইরাসমাস মুন্ডাস স্কলারশিপ (ইউরোপ): এই স্কলারশিপের আওতায় শিক্ষার্থীরা ইউরোপের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামে পড়াশোনার সুযোগ পান। এটি অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক স্কলারশিপ, যেখানে একাডেমিক রেকর্ড, ভাষা দক্ষতা, এবং প্রাসঙ্গিক অভিজ্ঞতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- শেভেনিং স্কলারশিপ (যুক্তরাজ্য): এই স্কলারশিপের আওতায় টিউশন ফি, মাসিক ভাতা, যাতায়াত ভাতা, ভিসা আবেদন খরচসহ বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করা হয়। আবেদনকারীর স্নাতকে ন্যূনতম ৬০% নম্বর, দুই বছরের কাজের অভিজ্ঞতা, এবং আইইএলটিএসে ন্যূনতম স্কোর ৬.৫ থাকতে হবে।
2.বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ স্কলারশিপ
অনেক বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব তহবিল থেকে মেধাবী শিক্ষার্থীদের স্কলারশিপ প্রদান করে। এই স্কলারশিপের জন্য সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর আবেদন করতে হয়, এবং মেধার ভিত্তিতে এটি প্রদান করা হয়।
স্কলারশিপের জন্য প্রস্তুতি ও আবেদন প্রক্রিয়া (How to get scholarship as an international student)
1. পাঠ্যক্রম ও বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন: আপনার আগ্রহ ও ক্যারিয়ার লক্ষ্য অনুযায়ী উপযুক্ত পাঠ্যক্রম ও বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন করুন। বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি সময়সূচি ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।
2. ভাষা দক্ষতা পরীক্ষা: প্রায় সব আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা প্রমাণের জন্য আইইএলটিএস, টোফেল বা সমমানের পরীক্ষার স্কোর চায়। উচ্চ স্কোর অর্জনের জন্য পর্যাপ্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করুন।
3. একাডেমিক ফলাফল: উচ্চ সিজিপিএ বা গ্রেড পয়েন্ট স্কলারশিপ পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ায়। তাই একাডেমিক ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালান বুদ্ধিমানের কাজ।
4. গবেষণা ও প্রকাশনা: গবেষণামূলক কাজ ও প্রকাশনা স্কলারশিপের ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা প্রদান করে। রিসার্চ পেপার বা আর্টিকেল প্রকাশের চেষ্টা করুন।এটা প্রফেসর কি আকর্ষণ করার মূল হাতিয়ার।
5. সুপারিশ পত্র (রিকমেন্ডেশন লেটার): বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বা কর্মক্ষেত্রের সুপারিশ পত্র স্কলারশিপ আবেদন প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সুপারিশকারীর অফিসিয়াল ইমেইল আইডি ব্যবহার করে সুপারিশ পত্র সংগ্রহ করুন।
6. প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত: ট্রান্সক্রিপ্ট, সনদপত্র, পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র, ভাষা দক্ষতা সনদ, সুপারিশ পত্র, এবং জীবনবৃত্তান্ত (সিভি) প্রস্তুত রাখুন।
7. আবেদন সময়সূচি মেনে চলা: প্রতিটি স্কলারশিপের আবেদন সময়সীমা ভিন্ন হতে পারে। সময়মতো আবেদন জমা দেওয়ার জন্য সময়সূচি সম্পর্কে সচেতন থাকুন।
বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য স্কলারশিপ পাওয়া একটি প্রতিযোগিতামূলক প্রক্রিয়া, তবে সঠিক প্রস্তুতি ও পরিকল্পনার মাধ্যমে এটি অর্জন করা সম্ভব। আপনার একাডেমিক রেকর্ড, ভাষা দক্ষতা, এবং প্রাসঙ্গিক অভিজ্ঞতা বৃদ্ধির দিকে মনোযোগ দিন। সময়মতো আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আপনার স্বপ্নের পথে এগিয়ে যান। শুভকামনা।
লেখক : ফজলে রাব্বি শিশির
Read More : মাহমুদুল্লা ক্রিকেট ক্যারিয়ার এর ইতি টানলেন এভাবে?